স্কুলের ইতিহাস ও পটভূমি
মেধা ও মনন সহযোগে সমাজ ও জাতি গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষাস্কুলের ভূমিকা অপরিমেয়। শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুল সুন্দর ব্যবস্থাপনায়, মৌলিক সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্যে, প্রশাসনিক দৃঢ়তায় এবং শিক্ষা—শিল্প—সংস্কৃতিচর্চায় প্রতিনিধিত্বশীল একটি বিদ্যাপীঠ হিসেবে অতিঅল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহী শহরের ০.৫ একর জায়গার উপর অগ্রগণ্য বিদ্যায়তনগুলোর মধ্যে একটি সম্মানজনক ও গৌরবদীপ্ত অবস্থান দখল করেছে।
রাজশাহী জেলার যোগ্য সন্তান কর্নেল কাজী এমদাদুল হক, পিএসসি, রাজশাহীর সেক্টর কমান্ডার পদে দায়িত্ব পালনকালে অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৫—২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডে শাহাদাত বরণ করেন। অনন্য সাধারণ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত কর্তব্যজ্ঞানে বিচক্ষণ, দায়িত্ব পালনে সুদক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ, বিনয়ী ও সাহসী জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারই নামানুসারে সেক্টর সদর দপ্তর রাজশাহী কতৃর্ক পরিচালিত ব্যাটালিয়নের গেট সংলগ্ন ০.৫ একর জমির উপর ২০১০ সালের ১ জুন স্থাপিত হয় শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুল। এই স্কুলে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন প্রাক্তন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি, বাংলাদেশ রাইফেলস ।
প্রতিষ্ঠালগ্নে মাত্র ৭টি কক্ষ, ১১জন শিক্ষক—কর্মচারী এবং ২৫৬ জন ছাত্র—ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু। ২০১১ থেকে পর্যায়ক্রমে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুলটি একটি নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নির্দেশিত আইনের সাথে সমন্বয় করে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় বিজিবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিমালা ও নীতিমালা (সংবিধান) দ্বারা স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে নার্সারি—দশম শ্রেণি পর্যন্ত শাখা ভিত্তিক মোট ছাত্র—ছাত্রী প্রায় ১৫০০ জন, শিক্ষক—কর্মচারী ৫০ জন, মোট কক্ষ ৩৪টি। শিক্ষানুরাগ ও শিক্ষা বিস্তারে বিজিবির ভূমিকা সর্বত্র।
স্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুলের লক্ষ্য শিক্ষার এমন একটি প্রক্রিয়ার সূচনা করা যার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার মনে যে চোখ আছে তাকে জ্ঞানের আলোর দিকে ফেরাতে পারে। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জ্ঞানান্বেষণের পুরোহিত ও জ্ঞান—সমৃদ্ধ চিন্তাশীলতার জীবন্ত রূপায়ণ হিসেবে তৈরি করাও এ শিক্ষাস্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের বোধের জগৎ, ভাব—ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষার জগৎ এবং মূল্যবোধ ও নৈতিকতার জগতকে রুচি ও সৌন্দর্যে দীপ্ত করার জন্য দরকার প্রাণোজ্জ্বল পরিবেশ। এ স্কুলে উর্বর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকার ও নিষ্ঠাসহকারে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিস্তৃত পরিসরে শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রত্যয়ী করার এবং তাদের মনে—প্রাণে সুস্থিত বুদ্ধি ও শুভ্রচেতনার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ স্কুল সারা বছর বিভিন্ন ধরনের গঠনমূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত থাকে।
স্কুলের মূলমন্ত্র
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো একটি বাতিঘর যার উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আত্মার জাগরণ, মানসিক ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে বইয়ের মাধ্যমে। এ জন্য আলোকিত মানুষ কথাটার সঙ্গে বই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বই শিক্ষার্থীদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রার পথ সুগম করে। যথাযথ শিক্ষা অর্জনে ও আলোর জন্য চেষ্টার নামই হলো আলোকিত হওয়া। যে আলোর শিখায় শিক্ষার্থী দেশ—জাতির জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির পথ তৈরি করবে। এসব দিক বিবেচনা করে শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুলের মনোগ্রামে বই ও প্রদীপ সংযোজন করা হয়েছে এবং মূলমন্ত্র হিসেবে ‘সুশিক্ষিত জনই সুবিবেচক’ নির্ধারণ করা হয়েছে।